Friday, April 15, 2011

মায়েদের কথা

শুরুতেই একটা শোক সংবাদ দিচ্ছি, মাসুম ভাইয়ের মা মারা গিয়েছেন। ইনলিল্লাহ ওয়াইন্নাইলাইহি রজিউন। খালাম্মার ডায়াবেটিক ছিল। আগে থেকেই উনি অসু্স্থ ছিলেন। হঠাৎ করেই সুগারলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কিছুক্ষন পর মারা যান। মাসুম ভাই সু্‌ইডেনে থাকেন। পিচ্চি একটা বাচ্চা আছে তার। গতকাল সংবাদটা শুনেছিলাম। প্রথমে মনে করলাম হয়ত মাসুম ভাইকে চিনি না। প্রবাসী একজন ভাইয়ের মা মারা গেছে। তাতেই দু:খ লাগছিল। কিন্তু আজকে মসজিদে গিয়ে জানতে পারলাম আমার পরিচিত একান্ত কাছের মাসুম ভাই। হঠাৎ করে কারো মা যদি মারা যায় তাহলে ব্যাপারটা আসলেই কষ্টের।আমি যদি কালকে সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আমার মা মারা গিয়েছেন তখন আমার কেমন লাগবে সেটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে।

তিন বছর আগের কথা । ব্লগের কণা(ছদ্মনাম) নামেরএকটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। কণারা দুই বোন। দুই বোন পিঠাপিঠি। এক সাথেই গ্রেজুয়েশন করেছে। বান্ধবী, খেলার সাথী, ক্লাস মেট বলতে তারা দুইবোন। একদিন কণার বড় বোন এর বিয়ে হয়ে যায়। কণা একা হয়ে যায়। কণার কিছুই ভাল লাগত না। খালামনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় মায়ের সেবাই করত কণা। ও বাহিরে বের হত না ।ভাল চাকরি ছিল, তাও ছেড়ে দিয়ে ছিল মায়ের সেবা করার জন্য। মাঝে মাঝে ইন্টারনেটে ঢু মারত। কণার কষ্ট গুলো ভালই বুঝতে পারতাম আমি। একান্ত একাকী অসুস্থ মাকে নিয়ে কণার সেই সংগ্রাম আমাকে অনেক প্রেরণা দিত। খালামনির সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল। অসুস্থ মানুষ ইন্টারনেটে পরিচিত একজন ছেলের সাথে দেখা করবে কিনা সেটা নিয়ে অনেকটুকুই কনফিউশানে ছিলাম। তাই খালামনিকে দেখতে যাওয়া হয়নি । কণার বিয়ের আগে দাওয়াতের কার্ডটি পাঠিয়ে দিয়ে বলল দোয়া করতে। কার্ড দেখে বুঝতে পারলাম তার টিচারের সাথেই বিয়ে হচ্ছে কণার। এই ব্রিলিয়ান্ট মেয়ের এই রকম বরই প্রাপ্য। সেই বিয়েতে যাওয়া হয়নি, যাওয়ার কথাও ছিল না শুধু দোয়া টুকু ছিল তার জন্য। সেই অসুস্থ খালামনিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে এখন। অনেকদিন যোগাযোগ নাই কণার সাথে। এইবার দেশে গেলে খালামনির সাথে দেখা করার চেষ্টা করব।

শাহিন ভাইয়া কানাডা থাকেন। আগে থেকেই পরিচিত। পাবনাতে বাসা।অনেক ভাল মানুষ। খালামনি একদিন রাস্তায় হাটতে গিয়ে ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করলেন। একটা চলন্ত ট্রাক তার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। প্রবাসে থাকা শাহিন ভাইয়ের কান্নাটা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম। আমাদের মেইল করে বলেছিলেন খোজ নেয়ার জন্য। খালামনির খোজ নিয়ে ছিলাম। আলসে করে সেই খালামনির সাথে দেখা করা হয়নি। শাহিন ভাইয়ের মা আমারও মা। কেন জানি এখন আমার মনে হয় যদি আমার মায়ের উপর চলন্ত ট্রাক উঠে যায়, তখন শাহীন ভাইয়ের মত কান্না করা ছাড়া আমার কি করার থাকবে । এখন বুঝতে পারছি তার সাথে দেখা করা উচিত ছিল। দেশে গিয়ে সুযোগ পেলেই সেই খালামনির সাথে দেখা করব।

অস্ট্রেলিয়াতে থাকত একান্ত কাছের ভাইবোন। সব সময়ই ওদের সাথে যোগাযোগ ছিল। সেই সময়ে আমি জানতে পারি তাদের মা, আমার খালামনি অসুস্থ।খালামনি বিশাল এক রোগে ভুগছেন।তার কথা মনে হলেই অন্তর থেকে দোয়াগুলো বেরিয়ে আসত। অনেক সম্মান আর শ্রদ্ধার সাথে তাদের কথা স্মরণ করতাম। তারা দেশে আসবেন । শুনে মনটা অনেক ভাল লাগছিল। অন্তত প্রবাসে থাকা খালামনির সাথে দেখা হবে। শামীম ভাইয়ের আত্মীয় হন সেই খালামনি। আগে থেকেই জেনে নিয়ে ছিলাম তারা অনেক ভাল। অনেক আশা নিয়ে ইমতিয়াজ (ছদ্মনাম) কে বললাম। তোমার মা বাবার সাথে দেখা করতে চাই। ইমতিয়াজ কেমন জানি হয়ে গেল। সে বলে বসল আপনি এখন দেখা করতে পারবেন না। আমার আব্বু অনেক বিজি । উনি সারাক্ষন বাসার বাহিরে থাকেন। আর আমরা তো মামার বাসায় থাকি। আমার মামার বাসায় বসার জায়গা নাই। আপনি মামার বাসায় যেতে পারবেন না। আমি অবাক!! কি বলে এই ছেলে। এতদিন ধরে যেই মানুষগুলোকে এত আপন জেনে এসেছি সেই মানুষদের সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না বিভিন্ন টালবাহানা করে। আমার বুঝতে বাকি রইল না। খালামনি তার মা সুলভ কাজটি করছেন না। যেই খালামনিকে আমি চিনতাম তিনি সেই খালামনি আর নেই । ইমতিয়াজ নিশ্চয়ই তার মায়ের নির্দেশেই আমাকে তার সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না। সেই খালামনির সাথে হয়ত সারাজীবনে কোনদিন দেখা হবে না। দেখা হবার কথাও নেই।শুধু এই টুকু বলে রাখি, আপনি আপনার সন্তানের জায়গায় আমার অবস্থাটা বসিয়ে একবার চিন্তা করুন। আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা কি ঠিক করেছিলেন ??


সবশেষে নিজের মায়ের কথা বলতেই হয়। মা মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে যান।তার টেককেয়ার করার জন্য আমার বোন আছে। আশা করছি বোনেরও কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে। আমার মা একা হয়ে যাবেন। মাকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। শাহিন ভাইয়ের আম্মুর মত নিয়মিত রাস্তায় হাটতে বের হন। শুধু ভয় হয় কোন দিন কোন ট্রাক এসে যেন উঠে যায় আমার মায়ের উপর। তখন প্রবাসে থেকে হয়ত একই ভাবে কান্না করব । আমার মা মাছুম ভাইয়ের আম্মুর মত হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল আমি কোথায় পাব আমার মা। আমার কোথায় পাব মায়ের আচল? যেই আচলে মিশে আছে আমার সুখদু:খ বেদনা। আল্লাহ তুমি আমার মাকে হায়াত দাও তাকে সু্স্থ ভাবে বেচে থাকার তওফীক দাও। আমীন।

No comments: