Friday, April 15, 2011

কিছু মানুষ যাদের কথা সারা জীবনে ভুলব না।

প্রায় এক বছরের মত হয়ে যাচ্ছে আমার বিদেশ জীবনের । যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। সেই অবস্থার মতই আমি গত এক বছরে অনেক নতুন মানুষ এর সাথে নতুন করে বন্ধুত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, যারা আমার এই নির্মম সময়গুলোতে আমার পাশে ছিলেন।


‘ই’ কথা না বললেই নয়। একজন ভাল বন্ধুর সাথে পথ চলার যে কি আনন্দ সেটা বুঝতে পেরেছি ওনাকে দেখে। খুব কাছ থেকে পথ চলা। আমার ইন্টারপ্রিটিশান গুলো তার সামনে প্রকাশ করা এবং সেইগুলো সত্য প্রমাণিত হওয়া, ব্যাপারটা অনেকবারই ঘটেছে। হাবিজাবি অনেক চিন্তা তার সাথে শেয়ার করেছি। একজন ভাল মানুষ পাশে থাকলে যে কি সুবিধা আমি সেটা কাছ থেকে দেখেছি। আমি ভুল করতে গেলেও তিনি শুধরে দিয়েছেন। এই রকম একজন মানুষ বন্ধু হিসাবে পাওয়া আসলেই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।



‘ফা’ এই মানুষটিকে আগে থেকে জানতাম। কিন্তু কখনো মেশার সুযোগ হয়নি। একবারই দেখা হয়েছিল কোন এক প্রোগ্রামে। তারপর কথা হয়নি অনেকদিন। আমার অন্তরের কথাগুলো তার সাথে শেয়ার করার সুযোগ হয়েছে। উনি আমার ছোট নাকি বড়? আমি কনফিউজড। আসলে ওনার বয়স আর আমার বয়স প্রায়ই সেইম। হয়ত বন্ধু হিসাবে আপনি, তুমি করে চলেছে আমার কথাবার্তা। অসাধারণ লেগেছে মানুষটিকে। তার পথ চলাতে অনেক কষ্ট গিয়েছে একবারও বুঝতে দেননি। বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তার কান্নার সাথে সাথে আমারও কান্না পেয়েছে। তার কষ্টের দিনগুলো শেষ হয়েছে। হুম, দেখা হবে তার সাথে। চুটিয়ে গল্প করে একটা বিকাল পার করার ইচ্ছা আছে।




'টি' আমার চেয়ে অনেক ছোট। প্রথম প্রথম মনে হত, এত ছোট মানুষ আমার কাছে কি চায়? এত ছোট মানুষও যে বন্ধু হতে পারে সেটা বুঝলাম টি এর কাছ থেকে। ওর বেড়ে ওঠাটা দেখেছি একদম কাছ থেকে। ছোটরাই একদিন বড় হয়। ওদের আবেগ থাকবে তাদের কাছে নিয়ে বুঝাতে হবে, এটা ঠিক না, ওটা ঠিক না। কিন্তু আমরা যদি ওদের দুরে ঠেলে দেই, ওদের কাছে টানবে কে? দেশ ছেড়ে এখন বিদেশ আছে সেই টি। তার সাথে অনেক অনেক জায়গা ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা আছে।


'এস' ডাক্তারী পড়ছে। মহাজ্ঞানী ডাক্তার মানুষ। আমার কেন জানি মনে হয় এস চশমা পড়ে। মোটা কাচের চশমা। তার ভিতর একটা অভিমানী অভিমানী ভাব আছে। আমি জানি এস চশমা পড়ে না। এই রকম কোন ভাবও তার নেই। তার একটা ঝাড়ির কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। অবশ্য সেই ঝাড়িটা অনেক আগে খেলে আমার জন্য অনেক ভাল হত। মানুষকে নিয়ে ভাবে। সম্ভব অসম্ভব সব রকমের ভাবনা। অনেকেই তো মানুষকে নিয়ে ভাবে, কয়জন এই ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। আশা করি, সে পারবে।



আরেক 'টি' সে আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। সেই দিন চ্যাটে আমাকে কোড নেমে ডাকা শুরু করল । ওমা, যার সাথে পরিচয়ই হয়নি সে আমাকে ডাকছে কোড নেমে!!! অবাক হয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম এই বয়সের মানুষগুলো এই রকমই হয়। এইচ. এস. সি পরীক্ষা দিল । আশা করি, ভাল রেজাল্ট করবে। তারপর ভর্তি পরীক্ষা। আশা করি ভাল জায়গায় চান্স পাবে।



'বি' এর সাথে দেখা উত্তরাতে। রিক্সা থেকে নেমেই বলল, আরে পাশা ভাই, আমি ব্লগের ‘বি’। বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। পরে জানতে পারলাম, উনি আমাদের ‘বি’ ভাই। অসাধারণ ভাল লেখেন। লেখালেখির পাশাপাশি গান, চিত্রনির্মাণ সহ অনেক কাজই করে যাচ্ছেন তিনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠছেন তিনি। তার পথ চলা বিভিন্ন সময় সাহস দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে আর সব সময়ের দোয়া দিয়ে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।


উপরের মানুষগুলো ছাড়াও অনেক মানুষ এর সাথে পরিচয় হয়েছে। যারা আমার পাশে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। ওরা অনেক অনেক বড় হবে এটাই আমার বিশ্বাস। এদের বড় হওয়াটাই আমি দেখে যেতে চাই।

পরিণতি (গল্প)

অফিস থেকে সাধারণত বাসায় যাই। বাইরে ঘোরাঘুরির অভ্যাস একদম নেই। বাসায় যাব মনে করেই অফিস থেকে বের হলাম। কিন্তু বাদ সাধল একটা মোবাইল কল। এই কলটা অন্য যেকোন কল থেকে আলাদা।

রফিক সাহেব অনেকদিন থেকে অসুস্থ। অসুস্থতার প্রথম দিকে তাকে দেখতে যেতাম। কিছুদিন আগে অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় উনাকে উত্তরার একটা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। তার এখন অন্তিম সময় চলছে। অনেকটা সেই কারণেই, আমাকে অনেক করে যেতে বললেন ভাবী।

রফিক সাহেব আর আমি একই সাথে বিমানবন্দরের চাকুরীতে জয়েন করি। দুজনেরই তখন তরুণ বয়স। অনেক মজার মজার স্মৃতি আছে তার সাথে। মাসের আয় তত বেশি না হলেও ব্যাচেলর হওয়ার কারণে ভালই চলে যেত আমাদের। অনেকবারই রফিক সাহেবের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি। আপনি আপনি করে কথা হলেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিল স্কুলের বন্ধুদের মতোই ঘনিষ্ঠ।

রফিক সাহেব বিয়ে করলেন, আমিও। দুইজনের বাসা খুবই কাছাকাছি। দুইজনেরই ছেলে সন্তান হয়েছে। ওরা পড়াশুনা করছে। ওদের জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখতে হয়। কম বেতনের চাকরীতে পোষাতে পারছি না। তখনও রফিক সাহেব আমার কাছে আপন ছিল। দুই জনে অফিস শেষে রাস্তায় হাঁটতে যেতাম । বিভিন্ন ধরনের কথা বলতাম। কি করা যায়? এতো অল্প পয়সা দিয়ে তো আর চলা যায় না।

এরপর অনেকটা হঠাৎ করেই রফিক সাহেব বদলে গেলেন। তার সাথে আমার সেই সুন্দর সম্পর্কটাও পাল্টে গেল। আমার কাছের মানুষটি আমার থেকে দুরে সরে গেল। প্রিয় বন্ধুর সাথে আর দেখা হয় না। রফিক সাহেব এখন অনেক ব্যস্ত। চোরাচালানী দলের লোকদের সাথে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। এতে তার কিছু উপরি ইনকাম হয়। আর আমি আছি আমার আগের অবস্থাতেই। তিনি উত্তরায় বাড়ি কেনেন। ছেলেকে রাজউক কলেজ মোটা বেতনে ভর্তি করান। আর আমি টাকার অভাবে সরকারী কলেজে আমার ছেলেকে পাঠাই। দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াতটা কোনও অংশে কম ছিল না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিভিন্ন ঈদে তাদের বাসায় পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়া হত।

আমার মিসেসকে দিয়ে রফিক সাহেব এর মিসেস কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই টাকা উৎস নিয়ে উনাদের মতামত কি? অবৈধ টাকা ইনকাম করা তো ঠিক না। তার মিসেস যে উত্তর দিলেন তা হল এই রকম - আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন কর্মচারীর রোষ্টারিং এর দায়িত্ব পালন করেন। এই রোষ্টারিং এ কেউ যদি খুশি হয়ে কিছু দেয়, সেই টাকা নেয়াটা দোষের কিছু না। আর আমার হাজব্যান্ড কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছেন না।

আমার ছেলে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি কোচিং করতে থাকে আর রফিক সাহেব এর ছেলে কোন কোচিং না করে টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। আমি দেখি কিছুই বলি না, বলতে পারি না। ওনাদের টাকা আছে তারা ছেলেকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করাবেন। আর আমার এত কম টাকা পয়সা যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নাম নেওয়াও আমার জন্য অন্যায়।

বিভিন্ন সময় বিপদে আপদে তার থেকে ধার নিয়ে আমি চলতাম। মানুষটি আজ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত । তাকে দুই বার ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছূ হয়নি। তার কাছে যেয়ে তার গত দিনের ভুলের কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দেব। আমি রিক্সায় করে যাচ্ছি আর ভাবছি মানুষটির কথা।

রফিক সাহেবের ছেলে শাহীনের সাথে যখনই দেখা হত তখনই দেখতাম সে মাথার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করছে। অনেকটা জড়তা নিয়ে বলত, আংকেল স্লামালাইকুম। তার বড় চুল আর হাতের ব্রেসলেট দেখে বোঝাই যেত, কতটুকু পেকে গিয়েছে ছেলেটি। একবার দেখলাম তার হাতে অনেক বড় একটি মোবাইল। আমি জিজ্ঞাসা করাতেই বলল, আংকেল এটা আইফোন। আমার ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। কি বলব নিজের ছেলেকে ভর্তি কোচিং এর জন্য ৮ হাজার টাকা দিতেই আমার খবর হয়ে গেছে সেখানে এই ছেলে ব্যবহার করছে অর্ধলক্ষ টাকা দামের মোবাইল!! নিজের ছেলে হলে কিছু বলা যেত, অন্যের ছেলে সহ্য করে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছুই করার নাই আমার।

উত্তরা মেডিক্যালে আমি রিক্সা থেকে নামলাম। কেবিন নাম্বার আগেই জেনে নিয়েছিলাম। চলে গেলাম সোজাসুজি তার কেবিনে। ভাবী আমাকে দেখে জায়গা খালি করে দিলেন। একটা চেয়ার টেনে বসলাম। রফিক সাহেব শুকিয়ে গিয়েছেন। বলা যায়, একবারে শুকনা কাঠ। তার রক্ত নিয়মিত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। শাহীন তাই হাসপাতালের বাহিরে। বাবার জন্য রক্ত জোগাড় করছে। বিভিন্ন বিষয় এ তার সাথে কথা বলছি। কথায় কথায় জানতে পারলাম, তার ছেলের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাডমিশন এর ব্যবস্থা করছেন। বিশদিনের মধ্যেই ছেলে চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া। তার কাগজপত্র নিয়ে এত দিন টেনশানেই ছিলেন। আজকে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই তো বিশ দিন পর চলে যাবে ছেলেটি।

কথা বলার মাঝামাঝি ভাবীর মোবাইলে কল আসল। ভাবী বাইরে চলে গেলেন । আমি রফিক সাহেব এর হাতটা ধরে বসে রইলাম। কত আপন মানুষ আজকে বিদায় এক বারে দ্বারপ্রান্তে। ভাবী ওপাশ থেকে মোবাইলে কান্নায় ভেংগে পড়লেন। আমি দ্রুত বাইরে চলে গেলাম। মোবাইলটি কানে দিয়ে জানতে পারলাম। শাহীনের বয়সী একজনের লাশ রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন পুলিশ। তার পকেটে ডাইরী থেকে তারা এই নাম্বারটি পেয়েছে। আমরা কেউ থানায় যেয়ে যেন লাশটি শনাক্ত করি। সম্ভবত ছিনতাইকারীর হাত থেকে দামী মোবাইল বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে ছেলেটি।

দ্রুত থানার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। আবারও রিক্সা নিলাম। যাওয়ার সময় ভাবছি, পুলিশের করা ফোনটি যেন মিথ্যা হয় । আল্লাহ আমি যেন লাশ ঘরে যেয়ে শাহীনকে না দেখি। আমি দেখতে চাই শাহীন বেঁচে আছে। রিক্সায় বসে থাকা আমার দু’চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে অশ্রু। আমি বলছি আল্লাহ তুমি আমার সহায় হও..............

হাসি কান্নার ব্যতিক্রমী ঈদ

গত বছরের কুরবানীর ঈদ একটু ব্যতিক্রমই কেটেছিল। তার আগেরটাও আরো ব্যতিক্রমী। সেইবার ঠিকই বুঝতে পারছিলাম-- ঐ ঈদের পর আর বাংলাদেশে কয়েকটি ঈদ করতে পারব না। বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের সাক্ষাৎকার টিভিতে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কিভাবে কাটে আপনজন ছাড়া ভিন্নদেশী ঈদগুলো.......

ঈদের দিন খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠতে হল। গোসল, সেভ করে আগের দিনের রান্না করা সেমাই খেয়ে রওনা দিলাম ঈদগাহে। ঈদগাহে সবার সাথে দেখা হল। বাহিরের তাপমাত্রা মাইনাস। সুতরাং, অনেক কাপড় চোপড় নিজের উপর চাপিয়ে ঈদের নামাযে আসা। নামায শেষে সবার সাথে গেলাম আনিস ভাই এর বাসায়। সেইখানে প্রথমে মিস্টি আর তারপরের খাবারটা ছিল অসাধারণ। খেতে খেতে একেবারে গলা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল।

আমাদের সাথে একজন নতুন মেহমান ছিল। প্রথমে আমি খেয়াল করিনি। পরে দেখি একজন সুইডিশ নওমুসলিম । আমাদের সাথে এক সাথে নামায পড়ে আনিস ভাইয়ের বাসায় এসেছেন দাওয়াত খেতে। নও মুসলিম নিয়ে আমাদের এক্সাইটমেন্ট অন্যরকম হওয়ারই কথা।সৈকত ভাইয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ও গল্প করছিলেন। আমিও টোকা দিয়ে দেখলাম। কি বলে ও। প্রথমেই জি্জ্ঞাসা করলাম, কেমন লাগছে ঈদ?? হুম, ভালই লাগছে। আমাদের সাথে এই ভাবে ভরপুর্তি খেয়ে ও খুবই আনন্দিত। এত গুলো মানুষের সাথে ঈদ এর আনন্দ ভাগাভাগি করতে তার খুবই ভাল লাগছে। তারপরই জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় পড়াশুনা করছে?? সে পড়ছে স্টোকহোম ইউনিভার্সিটিতে এনথ্রোপিলজিতে। কিভাবে সে ইসলামে আসল জিজ্ঞাসা করাতে সে বলছিল--- আমি আগে থেকে গড এ ভিলিভ করতাম। তবে কোন ধর্ম গ্রন্থই পুওর মনে হত না। আমি সব সময় মেডিটেশান করতাম। জানতে চেষ্টা করতাম আসল গড এর অস্তিত্ব। এর মধ্যেই আমার সাথে পরিচয় হল মুসলিম এক মেয়ের। মেয়েটি প্রাকটিক্যাল মুসলিম ছিল না। তার কাছ থেকে কিছু কিছু বিষয়ে জানতে চেষ্টা করতাম। আমি তার কাছ থেকে জানতে পারলাম আবরাহাম, ইসাক ও যেকব এরা সবাই ইসলামের নবী। তাদেরকে ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে। তারপর আমি মেয়েটির ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু বই নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। নয় মাস আগে আমি ইসলাম ধর্মে গ্রহণ করি।
তার কথাগুলো শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, মানুষ সত্যকে জানার জন্য আগ্রহী হলে আল্লাহ কিভাবে হেদায়াত দিতে পারেন। সে পুরা কোরআন শরীফ শেষ করেছে, ইসলামের বেসিকগুলো শেখার চেষ্টা করছে। আর আমার কোরআন তো দুরের কথা ইসলামের স্বাভাবিক আচরণগুলোও পালন করি না। সে ইসলামকে জানার জন্য অনেক কষ্ট করছে, নিজের পড়াশুনা বাদ দিয়ে শুধু ইসলামকে জানার জন্য আলাদা কোর্স করছে। আর আমরা ইসলামী বই পু্স্তক তো দুরের কথা নিয়মিত কোরআনই পড়ি না। আমাদের চরিত্র দেখলে মানুষ ইসলামের দিকে আসতে চায় না। আমাদের দেখে কত লোক যে ইসলাম থেকে দুরে সরে গেছে আল্লাহই ভাল জানেন। তার কথাগুলো শুনার পর আত্মসমালোচনা হচ্ছিল। হায়রে, আমরা কতটুকু ভাল মুসলিম সেটা আমরা ভাল করেই জানি।

আনিস ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে আরেকটা বাসায় যাব। সেই ভাইয়ার বাসায় গিয়ে ঘটল আরেক ঘটনা। ভাইয়াকে ফোন করাতে ওনি বললেন ওনার আপার ছেলে মারা গেছেন দুইদিন আগে। তাই মন খুব খারাপ। ওনি আরেক বাসায় আছেন । ওই বাসায়ই দেখা করতে হবে। ঠিক আছে আমার বন্ধু মিজানকে নিয়ে গেলাম ভাইয়ার সাথে দেখা করতে। মৃত্যু বাড়িতে ঈদের আনন্দ আর কতটুকু থাকতে পারে? ভাইয়া আমাদের আপার কাছে নিয়ে গেলেন। আপার ছেলে দুই দিন আগে সাত তলার বেলকনি থেকে পড়ে মারা গেছে। ২০ বছরের ছেলেটি কম্পিউটারে কাজ করছিল, ওনি টেলিফোন এ ভিজি ছিলেন। এই অবস্থায় ছেলেটি ব্যালকুনিতে যায়। আপা কিছুক্ষন পরে ছেলেটিকে খুজতে গিয়ে কোথাও খুজে পাননি। ওর এক বন্ধুকে ফোন দেন। সেও জানায় তার ওখানে যায়নি। তার বন্ধুটি নিচে গিয়ে দেখে ২০ বছরের ছেলেটি নিচে পরে আছে। হঠাৎ করে কোন মানুষ উধাও হয়ে গেলে যেমন লাগার কথা সেইরকম লাগছিল আমাদের কাছে। মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন ছেলেটি তার চোখের সামনে উধাও হয়ে গেল। আপা বার বারই বলছিলেন, “ আমাদের এত ভাল ছেলেটির কিভাবে এমন হল? ও আমার খুব অনুগত ছিল। সব সময় আমার কাছাকাছি থাকত। আমি বিশ্বাস করি না ও মারা গেছে। ও আসবে, আমি জানলা দিয়ে চেয়ে আছি ও আসবে। ও আসলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরব।“ সন্ত্বনা দিব কি, নিজেরই কান্না পাচ্ছিল। এত কম বয়সেও মানুষ মারা যায়?? আপাকে ঔষধ খাওয়ানো হল। তিনি বলছিলেন, আমি তো অসুস্থ না আমাকে ঔষুধ খাওয়াচ্ছ কেন?? জানি না, আপুটা কবে স্বাভাবিক হতে পারবেন? তার আগের বাসা চেইঞ্জ করা হচ্ছে। আপাকে আর আগের বাসায় উঠানো হবে না। তার আত্মীয়স্বজনরা এমেরিকা,ইংল্যান্ড থেকে আসছেন। ছেলেটির বাবা এখন বাংলাদেশে আছেন। তিনিও ফ্লাইটে উঠেছেন। এত বড় শোক এর খবর পাওয়ার পর কার মন ভাল থাকে বলুন।

ঈদের দিন সকালে প্রেজেন্টেশান ছিল। সেটা চেইঞ্জ করা হয়েছিল প্রফেসরকে ম্যানেজ করে। সেই প্রফেসর ক্লাসের শুরুতে জানতে চাইলেন আবরাহাম এর কে ছিলেন? আমাদের কি ধরনের ফ্যাস্টিবল এইটা? আমাদের একজন গিয়ে মুল বিষয়টা বলল। সন্ধ্যায় বাসায় আসলাম। এর পর গেটটুগেদার এর প্রস্তুতি । ১৫ জনের মত মানুষ আসবে। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে আসবে রান্না করে।আমি আর আমার রুমমেট এর ভাগে পড়েছে মুরগি। আমরা আগের দিন রান্না করে রেখেছি। আরেকজনের দায়িত্ব সবজি রান্না করা। সেই রান্নাতে তাকে সহায়তা করলাম। সবাই কিছু কিছু জিনিস নিয়ে গেটটুগেদার এ আসল। টেবিলে সব খাবার রেখে ফটোসেশান করা হল। মজার মজার গল্প আর বিশাল খাবার লিস্ট থেকে খেতে খেতে ১২ টা বাজল। বাসায় এসে নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। এইভাবেই কাটল আমার সুইডেনের শেষ ঈদ.......

মায়েদের কথা

শুরুতেই একটা শোক সংবাদ দিচ্ছি, মাসুম ভাইয়ের মা মারা গিয়েছেন। ইনলিল্লাহ ওয়াইন্নাইলাইহি রজিউন। খালাম্মার ডায়াবেটিক ছিল। আগে থেকেই উনি অসু্স্থ ছিলেন। হঠাৎ করেই সুগারলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কিছুক্ষন পর মারা যান। মাসুম ভাই সু্‌ইডেনে থাকেন। পিচ্চি একটা বাচ্চা আছে তার। গতকাল সংবাদটা শুনেছিলাম। প্রথমে মনে করলাম হয়ত মাসুম ভাইকে চিনি না। প্রবাসী একজন ভাইয়ের মা মারা গেছে। তাতেই দু:খ লাগছিল। কিন্তু আজকে মসজিদে গিয়ে জানতে পারলাম আমার পরিচিত একান্ত কাছের মাসুম ভাই। হঠাৎ করে কারো মা যদি মারা যায় তাহলে ব্যাপারটা আসলেই কষ্টের।আমি যদি কালকে সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আমার মা মারা গিয়েছেন তখন আমার কেমন লাগবে সেটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে।

তিন বছর আগের কথা । ব্লগের কণা(ছদ্মনাম) নামেরএকটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। কণারা দুই বোন। দুই বোন পিঠাপিঠি। এক সাথেই গ্রেজুয়েশন করেছে। বান্ধবী, খেলার সাথী, ক্লাস মেট বলতে তারা দুইবোন। একদিন কণার বড় বোন এর বিয়ে হয়ে যায়। কণা একা হয়ে যায়। কণার কিছুই ভাল লাগত না। খালামনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় মায়ের সেবাই করত কণা। ও বাহিরে বের হত না ।ভাল চাকরি ছিল, তাও ছেড়ে দিয়ে ছিল মায়ের সেবা করার জন্য। মাঝে মাঝে ইন্টারনেটে ঢু মারত। কণার কষ্ট গুলো ভালই বুঝতে পারতাম আমি। একান্ত একাকী অসুস্থ মাকে নিয়ে কণার সেই সংগ্রাম আমাকে অনেক প্রেরণা দিত। খালামনির সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল। অসুস্থ মানুষ ইন্টারনেটে পরিচিত একজন ছেলের সাথে দেখা করবে কিনা সেটা নিয়ে অনেকটুকুই কনফিউশানে ছিলাম। তাই খালামনিকে দেখতে যাওয়া হয়নি । কণার বিয়ের আগে দাওয়াতের কার্ডটি পাঠিয়ে দিয়ে বলল দোয়া করতে। কার্ড দেখে বুঝতে পারলাম তার টিচারের সাথেই বিয়ে হচ্ছে কণার। এই ব্রিলিয়ান্ট মেয়ের এই রকম বরই প্রাপ্য। সেই বিয়েতে যাওয়া হয়নি, যাওয়ার কথাও ছিল না শুধু দোয়া টুকু ছিল তার জন্য। সেই অসুস্থ খালামনিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে এখন। অনেকদিন যোগাযোগ নাই কণার সাথে। এইবার দেশে গেলে খালামনির সাথে দেখা করার চেষ্টা করব।

শাহিন ভাইয়া কানাডা থাকেন। আগে থেকেই পরিচিত। পাবনাতে বাসা।অনেক ভাল মানুষ। খালামনি একদিন রাস্তায় হাটতে গিয়ে ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করলেন। একটা চলন্ত ট্রাক তার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। প্রবাসে থাকা শাহিন ভাইয়ের কান্নাটা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম। আমাদের মেইল করে বলেছিলেন খোজ নেয়ার জন্য। খালামনির খোজ নিয়ে ছিলাম। আলসে করে সেই খালামনির সাথে দেখা করা হয়নি। শাহিন ভাইয়ের মা আমারও মা। কেন জানি এখন আমার মনে হয় যদি আমার মায়ের উপর চলন্ত ট্রাক উঠে যায়, তখন শাহীন ভাইয়ের মত কান্না করা ছাড়া আমার কি করার থাকবে । এখন বুঝতে পারছি তার সাথে দেখা করা উচিত ছিল। দেশে গিয়ে সুযোগ পেলেই সেই খালামনির সাথে দেখা করব।

অস্ট্রেলিয়াতে থাকত একান্ত কাছের ভাইবোন। সব সময়ই ওদের সাথে যোগাযোগ ছিল। সেই সময়ে আমি জানতে পারি তাদের মা, আমার খালামনি অসুস্থ।খালামনি বিশাল এক রোগে ভুগছেন।তার কথা মনে হলেই অন্তর থেকে দোয়াগুলো বেরিয়ে আসত। অনেক সম্মান আর শ্রদ্ধার সাথে তাদের কথা স্মরণ করতাম। তারা দেশে আসবেন । শুনে মনটা অনেক ভাল লাগছিল। অন্তত প্রবাসে থাকা খালামনির সাথে দেখা হবে। শামীম ভাইয়ের আত্মীয় হন সেই খালামনি। আগে থেকেই জেনে নিয়ে ছিলাম তারা অনেক ভাল। অনেক আশা নিয়ে ইমতিয়াজ (ছদ্মনাম) কে বললাম। তোমার মা বাবার সাথে দেখা করতে চাই। ইমতিয়াজ কেমন জানি হয়ে গেল। সে বলে বসল আপনি এখন দেখা করতে পারবেন না। আমার আব্বু অনেক বিজি । উনি সারাক্ষন বাসার বাহিরে থাকেন। আর আমরা তো মামার বাসায় থাকি। আমার মামার বাসায় বসার জায়গা নাই। আপনি মামার বাসায় যেতে পারবেন না। আমি অবাক!! কি বলে এই ছেলে। এতদিন ধরে যেই মানুষগুলোকে এত আপন জেনে এসেছি সেই মানুষদের সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না বিভিন্ন টালবাহানা করে। আমার বুঝতে বাকি রইল না। খালামনি তার মা সুলভ কাজটি করছেন না। যেই খালামনিকে আমি চিনতাম তিনি সেই খালামনি আর নেই । ইমতিয়াজ নিশ্চয়ই তার মায়ের নির্দেশেই আমাকে তার সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না। সেই খালামনির সাথে হয়ত সারাজীবনে কোনদিন দেখা হবে না। দেখা হবার কথাও নেই।শুধু এই টুকু বলে রাখি, আপনি আপনার সন্তানের জায়গায় আমার অবস্থাটা বসিয়ে একবার চিন্তা করুন। আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা কি ঠিক করেছিলেন ??


সবশেষে নিজের মায়ের কথা বলতেই হয়। মা মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে যান।তার টেককেয়ার করার জন্য আমার বোন আছে। আশা করছি বোনেরও কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে। আমার মা একা হয়ে যাবেন। মাকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। শাহিন ভাইয়ের আম্মুর মত নিয়মিত রাস্তায় হাটতে বের হন। শুধু ভয় হয় কোন দিন কোন ট্রাক এসে যেন উঠে যায় আমার মায়ের উপর। তখন প্রবাসে থেকে হয়ত একই ভাবে কান্না করব । আমার মা মাছুম ভাইয়ের আম্মুর মত হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল আমি কোথায় পাব আমার মা। আমার কোথায় পাব মায়ের আচল? যেই আচলে মিশে আছে আমার সুখদু:খ বেদনা। আল্লাহ তুমি আমার মাকে হায়াত দাও তাকে সু্স্থ ভাবে বেচে থাকার তওফীক দাও। আমীন।

স্বজন হারানোর বেদনা

বাংলাদেশে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় টিউশনি করতাম। পড়াতে কখনো মন্দ লাগত না। সেই থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নেয়া। সুইডেনে একটা টিউশনি পেয়ে গেলাম। ছাত্র অসাধারণ ভাল। এ প্লাস (৮০%) বললে ভুল হবে ৯০% মানের। সবগুলোতে ভেরি ভেরি গুড পাওয়া। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি।

যা বলছিলাম পড়াচ্ছি একটি বাঙালী ফ্যামিলিতে । পরিবারের ভাইয়া ভাবী সবাই আগের পরিচিত। ভাইভাবী অনেক আন্তরিক। সেইদিন ভাবী বলছিলেন হঠাৎ করেই তাদের বাংলাদেশ যেতে হচ্ছে। তার শাশুড়ী আম্মা খুব জোড়াজুড়ি করছেন দেশে যাওয়ার জন্য। শেষ বারের মত যেন তাদের দেখে আসেন । অনেক তাড়ার কারণে ভাইভাবী আর তিন বাচ্চা মিলে হঠাৎ করেই সুইডেন থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। মায়ের মনের কথা ভেবে যেতে হচ্ছে। ভাবী যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি খালাম্মা (ভাইয়ার মা) মারা যাবেন। গতদিন শুনতে পেলাম খালাম্মা মারা গেছেন। শুনেই ভাবীর কথাগুলো মনে পরছিল। আজকে ভাইয়ার সাথে কথা বল্লাম। ওনার জন্য দোয়া করতে বলেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। তাদের ধৈর্য্স ধরার তৌফিক দান করুন।
সময়টা অনেক আগের। তখন আমার মামা আজিমপুরে একটি মসজিদে ইমামতির চাকরি করতেন। আমার আম্মার নানা মানে আমার বড় আব্বা অনেক পরহেজগার মানুষ ছিলেন। সব সময় আল্লাহ ও তার রাসুলের গল্প করতেন। একবার আমি নানু বাড়ি গেলাম সেই সময়ে বড় আব্বা সেখানে ছিলেন। আমি তার কাছে গল্প শুনতে চাইলাম। ওনি আমাকে শুনালেন বলত, সব চেয়ে বড় কে? কার পেট সব চেয়ে বড়? আল্লাহ কোথায় থাকেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন আমি অনেক ছোট এত কিছু বুঝতাম না। কিছুক্ষণ পর ভাল না লাগায় ওনার কাছ থেকে চলে গিয়েছিলাম। অনেক পরহেজগার মানুষ । ভুত প্রেত এর গল্প করা হয়ত তিনি পছন্দ করতেন না। তাই তিনি এই গল্প করতে চেয়েছিলেন। আমার বড় আব্বার একটা ইচ্ছা ছিল ওনার নাতি মানে আমার মামা যেন তার নামাযে ইমামতি করেন। তখন কমিউনিকেশন সিস্টেম আজকের মত এত উন্নত ছিল না। আমার মামা হঠাৎ করে বাড়ী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বাড়িতে যাওয়ার পর বড় আব্বা মারা যান। বড় আব্বার নামাযে জানাযা মামার ইমামতিতেই হয়েছিল। অনেক মানুষ হয়েছিল সেই জানাযায়। খুব অবাক করা ব্যাপার মামা যদি সে সময় গ্রামে না থাকতেন হয়ত তিনি নামাযে জানাযা পড়াতে পারতেন না। কি কাকতালীয়ভাবে ব্যাপারটা ঘটেছিল।


আমার কেন জানি মনে হয়, ভাল মানুষরা কোন ইচ্ছা করলে আল্লাহ সেটা পুরণ করে দেন। হয়ত ইচ্ছাটা অনেক ছোট, তার মৃত্যুর সময় এই মানুষগুলোকে সে দেখতে চায়। তার আশেপাশের ভাল ও প্রিয় মানুষগুলো যদি মৃত্যুর সময়, কঠিন সময়টিতে থাকে হয়ত সেই মানুষটির কষ্ট কম হয়। তাই আল্লাহ তার শেষ ইচ্ছাটা পুরণ করার ব্যবস্থা করেন।

যাদের আপনজন চিরদিনের জন্য চলে যায় তারাই বুঝতে পারে প্রিয়জন হারানো কত কষ্টের। তাই তো সেই গানটি আজও কানে বাজে---

যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা....