Friday, April 15, 2011

স্বজন হারানোর বেদনা

বাংলাদেশে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় টিউশনি করতাম। পড়াতে কখনো মন্দ লাগত না। সেই থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নেয়া। সুইডেনে একটা টিউশনি পেয়ে গেলাম। ছাত্র অসাধারণ ভাল। এ প্লাস (৮০%) বললে ভুল হবে ৯০% মানের। সবগুলোতে ভেরি ভেরি গুড পাওয়া। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি।

যা বলছিলাম পড়াচ্ছি একটি বাঙালী ফ্যামিলিতে । পরিবারের ভাইয়া ভাবী সবাই আগের পরিচিত। ভাইভাবী অনেক আন্তরিক। সেইদিন ভাবী বলছিলেন হঠাৎ করেই তাদের বাংলাদেশ যেতে হচ্ছে। তার শাশুড়ী আম্মা খুব জোড়াজুড়ি করছেন দেশে যাওয়ার জন্য। শেষ বারের মত যেন তাদের দেখে আসেন । অনেক তাড়ার কারণে ভাইভাবী আর তিন বাচ্চা মিলে হঠাৎ করেই সুইডেন থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। মায়ের মনের কথা ভেবে যেতে হচ্ছে। ভাবী যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি খালাম্মা (ভাইয়ার মা) মারা যাবেন। গতদিন শুনতে পেলাম খালাম্মা মারা গেছেন। শুনেই ভাবীর কথাগুলো মনে পরছিল। আজকে ভাইয়ার সাথে কথা বল্লাম। ওনার জন্য দোয়া করতে বলেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। তাদের ধৈর্য্স ধরার তৌফিক দান করুন।
সময়টা অনেক আগের। তখন আমার মামা আজিমপুরে একটি মসজিদে ইমামতির চাকরি করতেন। আমার আম্মার নানা মানে আমার বড় আব্বা অনেক পরহেজগার মানুষ ছিলেন। সব সময় আল্লাহ ও তার রাসুলের গল্প করতেন। একবার আমি নানু বাড়ি গেলাম সেই সময়ে বড় আব্বা সেখানে ছিলেন। আমি তার কাছে গল্প শুনতে চাইলাম। ওনি আমাকে শুনালেন বলত, সব চেয়ে বড় কে? কার পেট সব চেয়ে বড়? আল্লাহ কোথায় থাকেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন আমি অনেক ছোট এত কিছু বুঝতাম না। কিছুক্ষণ পর ভাল না লাগায় ওনার কাছ থেকে চলে গিয়েছিলাম। অনেক পরহেজগার মানুষ । ভুত প্রেত এর গল্প করা হয়ত তিনি পছন্দ করতেন না। তাই তিনি এই গল্প করতে চেয়েছিলেন। আমার বড় আব্বার একটা ইচ্ছা ছিল ওনার নাতি মানে আমার মামা যেন তার নামাযে ইমামতি করেন। তখন কমিউনিকেশন সিস্টেম আজকের মত এত উন্নত ছিল না। আমার মামা হঠাৎ করে বাড়ী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বাড়িতে যাওয়ার পর বড় আব্বা মারা যান। বড় আব্বার নামাযে জানাযা মামার ইমামতিতেই হয়েছিল। অনেক মানুষ হয়েছিল সেই জানাযায়। খুব অবাক করা ব্যাপার মামা যদি সে সময় গ্রামে না থাকতেন হয়ত তিনি নামাযে জানাযা পড়াতে পারতেন না। কি কাকতালীয়ভাবে ব্যাপারটা ঘটেছিল।


আমার কেন জানি মনে হয়, ভাল মানুষরা কোন ইচ্ছা করলে আল্লাহ সেটা পুরণ করে দেন। হয়ত ইচ্ছাটা অনেক ছোট, তার মৃত্যুর সময় এই মানুষগুলোকে সে দেখতে চায়। তার আশেপাশের ভাল ও প্রিয় মানুষগুলো যদি মৃত্যুর সময়, কঠিন সময়টিতে থাকে হয়ত সেই মানুষটির কষ্ট কম হয়। তাই আল্লাহ তার শেষ ইচ্ছাটা পুরণ করার ব্যবস্থা করেন।

যাদের আপনজন চিরদিনের জন্য চলে যায় তারাই বুঝতে পারে প্রিয়জন হারানো কত কষ্টের। তাই তো সেই গানটি আজও কানে বাজে---

যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা....

No comments: