Friday, June 19, 2009

স্বপ্ন ও বাস্তবতা!!!

কয়েকদিন ধরে মনটা বিশেষ একটা ভাল নাই। ধুর, কিচ্ছু ভাল লাগে না। যে জীবনে কোন ফিলিংস নাই সেটা আবার জীবন হল। “চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী” টাইপের জীবন আর ভাল লাগে না। ইউনি ভার্সিটির ক্লাস আর পড়াশুনা এগুলোর বাইরেও তো আরেক জীবন আছে। নিজের জীবন, প্রিয়তমার জীবন , তার হাত ধরে ঘুরতে যাওয়ার জীবন, কত্ত কিছু! উফ কবে আসবে সেইদিন, অনতত বুঝতে যদি পারি কে হচ্ছে আমার সেই প্রিয়তমা তাহলে তো মন্দ হয় না। কতই না এক্সাইটমেন্ট এই ইস্যুতে!
আজকে রাতের স্বপ্নটা ছিল অসাধারন। হ্যা, আমি দেখেছি আমার প্রিয়তমাকে। একবারে ডানা কাটা পরী। স্বপ্নে আমি আল্লাহর কাছে যা চাচ্ছি তাই হচ্ছে। বলছি, আল্লাহ এটা করে দাও। তিনি সেটাই করে দিচ্ছেন। একবার মনে আসল আচ্ছা, আমার প্রিয়তমা কে হবে। এটা কি জানা যাবে? এমনি আমার সামনে এসে হাজির হল আমার প্রিয়তমা। দেখতে খুবই সুন্দরী । অসাধারণ এক তন্বী নারী আমার সামনে। আমি তাকে দেখে বললাম, ওহ! এই মেয়ে। আমি তো একে চিনি। ঘুমের ভিতর দেখেই আমার খুশি খুশি লাগছিল। হ্যা, সকালে উঠে আমি এর ব্যাখ্যা করতে বসলাম। মেয়েটি ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী। আমি যে রকম চাই সেই রকম মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে হবে। তাকে চেনা চেনা লেগেছে তাহলে তার সাথে আমার মনের মিল হবে খুব বেশি। আর সে হবে আমার আগের পরিচিতি।উফ, স্বপ্নটা দেখে কতই না ভাল লাগছে। লজিক দিয়েই স্বপ্নটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। তাতেই মনটা খুব ভাল লাগল। অন্যরকম একসাইটমেন্ট! এই না হলে জীবন!!
আমি মনে মনে হাসি যাই হোক আমার জন্য ভাল কিছুই আছে। আল্লাহ আমার জন্য ভাল একটা মেয়ে রেডি করে রেখেছেন।কাউকে তার স্বপ্নের কথা বলতে শুনলে আগ্রহ নিয়েই শুনি।

সেইদিন আমার বোন আমাকে বলছিল, সে অনেক খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছে। এক সাথে দুইটা মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। বলতে বলতে সে হাসতে থাকে। সে বলছিল-- আমার বান্ধবী রিনি আর ওর বয় ফ্রেন্ড এর সাথে আমার খুবই ভাল সম্পর্ক ।তাদের উপর মাঝে মাঝে আমি রেগে উঠি কারণ তারা ফ্রী মিকসিং করে। আমার এই সব একদম পছন্দ হয় না। তাদের উপর রাগ করে আমি তাদের পর পর দুইটা গুলি করে তাদের হত্যা করে ফেললাম।তাদের হত্যার পর পিস্তলটা আমার হাতেই ছিল। আমি পিস্তলটা লুকানোর চেষ্টা করলাম। আমার হাতে ওদের রক্তের দাগও ছিল। আমি এটা লুকানোর কথা একে বারেই ভুলে গেলাম। আমার মাথাটা আসলেই গরম । মাথা গরম হয়েছে তাই বলে একসাথে জোড়া খুন করে ফেলব তাতো হতে পারে না। খুন করে আমি পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাইলাম না। আমি লুকোচুরির চেষ্টা করছি। এই ভয়ে আছি, যদি কেউ বুঝতে পারে আমি এই হত্যা করেছি তাহলে আমার বাবা-মা মানুষের কাছে ছোট হয়ে যাবে। আমি বার বার চেষ্টা করছি বাচার জন্য।আমি ধরা খেলে জেলে চলে যাব, এতে শাস্তি পেয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার সুযোগ আছে।কিন্তু এই ভয়ে আমি ধরা দিচ্ছি না একজন জেল খাটা মেয়েকে বিয়ে করবে কে? কি সুন্দর লজিক!! ঘুমের মধ্যেও লজিক আমার ঠিক ছিল। এই অবস্থায় আমার ঘুম ভেংগে গেল। এটা বলেই ও ফিক করে হাসি দিল। যাক, এটা স্বপ্নে হয়েছিল বলে রক্ষা। আমার বোনের কথা গুলো শুনে ভাবতে লাগলাম এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে? তার ঘনিষ্ট দুইজন মানুষকে সে খুন করেছে। মানে কি? মানে হল, তার সাথে ঘনিষ্ট দুইজন মানুষের সাথে সে প্রতারনার আশ্রয় নিবে । যারা হবে তার একান্ত কাছের। তারপর সে এটা লুকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু লুকোতে পারবে না। কারণ এর সিমটম তার গায়ে লেগে থাকবে। সে এর জন্য অনুতপ্ত হবে। কিন্তু শুধরানোর কোন সুযোগ সে পাবে না। সে মনে মনে ভাববে যদি আমি স্বীকার করলে সবার কাছে আমার আপনজনরা ছোট হয়ে যাবে । তারপর সে এটা তার জীবনে বিশাল রকমের জটিলতা তৈরী করবে। উফ, আমি এইগুলো কি ভাবছি। না, এই ব্যাখা মেনে নেয়া যায় না। এই রকমই স্বপ্ন সত্য হতেই পারেই না। আমি যা লজিক দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি তা কোনদিন হবেও না। আমার বোনটার জীবনে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটবেও না।

আসলে আমি কেনই বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা লজিক দিয়ে করতে গেলাম। আর আমি তো আমার ভবিষ্যত জানি না। আমি জানি না কোথায় আছে আমাদের আগামীদিনগুলো। আমি ভুলে যেতে চাই আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যাগুলো । ভাবতে চাই, আমরা সবাই স্বাভাবিক একজন মানুষ। যারা ভবিষ্যত সম্বন্ধে কিছুই জানি না। আমরা কাজ করে যেতে আসছি, কাজ করে যাচ্ছি। এইত আমাদের জীবন। যা আমাদের নিয়তি তা হবেই। আল্লাহ এই ধরনের বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে আমাদের তুমি রক্ষা কর।

[এই গল্পটা সম্পূর্ণ আমার কল্পনার । এটার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। ]

আমার মা

মাকে নিয়ে লেখতে বসে কিভাবে যে শুরু করব সেটাই বুঝতে পারছি না। কোন দিক রেখে কোন দিকের কথা যে বলব সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার মা, মায়ের সাথে আমার পরিচয় আমার জন্মেরও দশ মাস আগে। হা, তার গর্ভেই আমার জন্ম। তার মাধ্যমেই আমি এসেছি এই পৃথিবীতে। অজানা এই পৃথিবীতে তিনিই ছিলেন আমার একমাত্র আপন। তিনিই ছিলেন আমার একান্ত কাছে।

আমার নানার অজ পাড়াগায়ের বাড়ীতেই আমার জন্ম । মায়ের বিয়ের পর মা চলে গেলেন আমার দাদার বাড়ী। আমার দাদার বাড়ী ছিলো আরো অজ পাড়া গায়ে। বাড়ীর ছোট বউ হওয়াতে বিয়ের প্রথম দিকে মা বেশিই বাপের বাড়ী থাকতেন। বাবা থাকতেন সিলেটে। মাসে আসতেন আবার চলে যেতেন। মা একা একাই থাকতেন। এই অবস্থায় আমার নানা বাড়ীতে আমার জন্ম হয়।

মা যখন দাদা বাড়ী যেতেন তখন আমার নানা বাড়ীর জন্য সব সময়ই মন কাদত। আমার দাদা বাড়ী থেকে আসতে মাকে অনেক টাকার রিক্সা ভাড়া গুনতে হত। মা এই টাকা আস্তে আস্তে জমিয়েই তারপর আমার নানা বাড়ি আসতেন। আমার দাদা বাড়ী ছিল গ্রামের দক্ষিণ কোনায়। মার কাছে শুধুই মনে হত, ইস, তার শ্বশুর বাড়ীটা যদি উত্তর কোনায় হত তাহলে কতই না সহজে উনার বাপের বাড়ী যেতে পারতেন।

আমার মা, পড়াশুনা বেশি একটা করতে পারেননি। তিনি যখন ক্লাস এইটে তখন আমার মামা তার স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তারপরও তিনি তার পড়াশুনা বন্ধ করা যায়নি তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই স্কুলে যেতেন। মা একেবারেই খারাপ স্টুডেন্ট ছিলেন না। ক্লাস নাইনে উঠার পর মামা আমার মার বইগুলো লুকিয়ে ফেলেন । এরপর থেকে মার পড়াশুনা আর এগোই নি।সেই যে পড়া বন্ধ হল তা আর হয়ে উঠেনি। আমরা যখন ছোট ছিলাম মা আমাদের পাশে বসে আমাদের বইখাতাগুলো নাড়তেন আর দেখতেন কিভাবে আমরা পড়ি। মা সবসময়ই আমাদের পড়াশুনার ব্যাপারে কেয়ারফুল ছিলেন। সেই ছোট বেলা থেকেই দেখতাম আমার মা আমাদের স্কুলের জামা কাপড়গুলো কত যত্ন সহকারে ইস্ত্রি করে দিতেন।

আমরা যখন ঢাকায় আসি তখন আমার মামাই আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। মায়ের জমানো টাকা ভেংগে আমাদের গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। আমাদের ছোট্ট বাসায় আমরা মাত্র চারজন মানুষ আমি, মা-বাবা আর আমার এক বছরের ছোট বোন। গ্রামের বাড়ি থেকে আসার কারণে মার খুব বাড়ীর জন্য মন কাদত। তিনি বিভিন্ন সময় বাড়ীর জন্য কান্না কাটি করতেন। নতুন সংসারে আমাদের কিছুই ছিল না। শুধু একটা খাট দিয়েই শুরু করতে হয় আমার মায়ের সংসার।

আমার মা বিভিন্ন সময় আমার মাধ্যমে পাশের বাসার খালাম্মাদের কাছ থেকে হাওলাত নিতেন। টানাটানির সংসার হাওলাত না করলে চলতই না। আমিও এনে দিতাম সেই টাকাগুলো। একবার আমি এক বিপদে পড়লাম। আমি এক বড় ভাইয়ের লাটিম হারিয়ে ফেল্লাম। সেই লাটিম কিনে দেওয়ার মত টাকা আমার নেই। আমি কি করি? অবশেষে বুদ্ধি করে মায়ের নামে মিথ্যে বলে দশ টাকা হাওলাত নিলাম। কিছু দিনের মধ্যে ধরাও খেয়ে গেলাম। সেই পিচ্চি বয়সেই আমাকে আমার মা অনেক মানুষের সামনে কান ধরে উঠবস করালেন। সেই শিক্ষাটা আমি আজও ভুলতে পারি না।

একবার আমার মায়ের সাথে আমার বাবার প্রচন্ড ঝগড়া হয়। মা রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। আমি উনাকে খোজার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাই। বাসার ছাদ, বিভিন্ন বাসা এমন কি আমি রেল লাইনে পর্যন্ত মাকে খুজতে যাই। তাকিয়ে তাকিয়ে খুজছি আমার মা কোথায় আছে? হ্যা, মাকে পাওয়া গিয়েছিল । আমার মা গিয়ে ছিলেন আমার এক দাদার বাসায়। অবশেষে দাদা আমার মাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় দিয়ে যান।

আমার মা বেশী শিক্ষিত না হওয়ায় ভার্সিটি কি জিনিস, তিনি তা বুঝতেন না।ওনার এক বান্ধবীর কাছে শুনলেন যে ওনার ছেলে সিলেট ভার্সিটিতে পড়ে । আমার মা মনে করেছিলেন হয়ত উনার ছেলে অনেক বড়। তাই ভার্সিটিতে পড়ে। অথচ সেই মায়ের সন্তান হয়েই আমরা দুই ভাইবোন আজ ভার্সিটি পড়ছি। আমি ভার্সিটিতে চাকরিও করছি।

আমার মা সব সময়েই আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা বলতেন।আমি তখন ইন্টার পাশ করার পর ভার্সিটি এডমিশন দিচ্ছি। কোন জায়গায়ই আমার হচ্ছিল না। কি যে খারপ অবস্থা? তারপরও মা আমার জন্য দোয়া করতে থাকলেন। হ্যা, তারপরই কম্পিউটারের মত ভাল সাবজেক্ট এ আমার চান্স হয়। শুধু মাত্র মায়ের দোয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

আরেকটি ঘটনা, আমার তখন অনার্স ফাইনাল এক্সাম হচ্ছে। সেই সময়ে আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে গেলাম। হাসপাতালে ভর্তি করানো ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এইদিকে আমার বন্ধুরা ছাত্রজীবনের শেষ পরীক্ষা দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। তখনও দুইটা ফাইনাল এক্সাম বাকী। আমার জন্য তিনবার পরীক্ষা পিছানো হল। আমার বন্ধুরা আর আমার জন্য ওয়েট করতে রাজী না। এইবার পরীক্ষা না দিলে একেবারে ইয়ার লস। পাক্কা এক বছর বসে থাকতে হবে। আমি এতই অসুস্থ যে পড়াশুনা কি জিনিস সেটাই ভুলে গেছি। আম্মাকে পরীক্ষা কথা বলাতে তিনি বললেন আল্লাহর উপর ভরসা কর। আল্লাহ যেন তোমাকে তোমার মঙ্গলটা দেন। সেইসময় মায়ের দোয়ার কারণেই আমি রক্ষা পেয়েছিলাম পুরা একবছর শিক্ষা জীবনের লস থেকে। আমি সুস্থ হয়েই পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম সেই সময়ে।

আমার মা একে বারেই কোন কিছুর প্রতিশোধ নেওয়া পছন্দ করেন না। কিছুদিন আগের ঘটনা, একটা পরিবার আমার সাথে বিশাল রকমের গাদ্দারী করল । আমি এই দিকে বলতেও পারছি না কাউকে বিষয়টা। মাকে শুধু ফোন করে বললাম আমার জন্য দোয়া করো, আমি বিশাল এক বিপদের মধ্যে আছি। আমার মা আমার জন্য দোয়া করলেন। তারপরও আমার কান্নাকাটি থামছে না দেখে আমার মা আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , কি হয়েছে বাবা? তুই আমাকে বল। কাউকে কিছু না বলার শর্তে আমি আমার মাকে সব ঘটনা খুলে বললাম। তিনিও আমার সাথে কাদলেন। অবশেষে বললেন, আল্লাহ যা করে ভালর জন্য করে।তুই ওদের কোন ক্ষতি করবি না। শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দে যেন আল্লাহ তাদের শাস্তি দেন।

আচ্ছা, আমি আমার মার কাছে কখন যাই। আমার যখন খুব সমস্যা আমি তখনই ছুটে যাই মায়ের কাছে। জ্বরাক্রান্ত হলে মা যদি পাশে বসে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় তখন কতই না ভাল লাগে। মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে কতই না ভাল লাগে। আমার বিপদের দিনগুলোতে তিনি থাকেন আমার পাশে। একান্ত পাশে।

আর আমি! আমার অফিসের ব্যস্তার কারণে মাকে ঠিক মত সময় দিতে পারি না। মা হয়ত বললেন আমার আজকে ডাক্তার দেখাতে যাওয়া দরকার সেইসময় বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আমি যেতে পারি না মায়ের সাথে। মায়ের অভাব গুলো বুঝতে পারি না।মাকে বিভিন্ন সময় বুঝে না বুঝে কষ্ট দেই। সেই মাই আমার পাশে থাকেন সারাক্ষণ, আমার দু:খের দিনগুলোতে তিনিই আমার সাথী। সুখের দিনগুলোতে আমি এই আমি একেবারেই ভুলে যাই আমার মাকে। মার সেই ক্লান্তি মাখা মুখের কথা একেবারেই মনে করতে পারি না। মনে থাকে না আমার মায়ের কষ্টগুলো। মাকে যখনই ফোন করে জিজ্ঞাসা করি মা কেমন আছ? তিনি কখনও শরীর খারাপ থাকলেও বলেন না যে তিনি খারাপ আছেন।

কিছু্দিন পরেই হয়ত বাংলাদেশ ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আমাকে চলে যেতে হবে। আমার মা, আমার একান্ত কাছের মা থেকে চলে যাব অনেক দুরে। হয়ত আবার দেখা হবে দুই তিন বছর পর। এইদিন গুলো আমার মা কেমন থাকবেন? হয়ত আমি ফোন করে কথা বললে অসুস্থ অবস্থায়ই বলবেন তিনি ভাল আছেন। আমার জন্য জায়নামাজে বসে বসে দোয়া করবেন। নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমার মা থেকে আমি আলাদা হব। আমার বউ হবে, বাচ্চা হবে। তাদের নিয়ে আমি দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবো।আর আমার মা অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকবেন এই বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মাটিতে। হয়ত আমার মা আরো অসুস্থ হবেন, একদিন মারাও যাবেন।দেশের মাটিতে এসে তার কবরের পাশে দাড়িয়ে শুধু আমি কান্নাই করে যেতে পারব।
[এই লেখাটি উৎসর্গ করলাম বর্তমান ও আগামী দিনের মা দেরকে।]

Friday, March 20, 2009

মা! তুমি আমায় ক্ষমা করো।

মা এবার বাড়ী যেয়ে তোমার সাথে বেশি সময় দিতে পারিনি। আমি কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসছি শুনে নিশ্চয়ই তুমি অনেক খুশি হয়েছিলে। আমার বাংলাদেশে আসাটা ছিল তোমাকে দেখার জন্য নয় । আমি এসে ছিলাম আমার একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে।

দাড়াও! একটু দাড়াও!! আমার বিছানার পাশের টেবিল লাইটটা নিবিয়ে আসি। মা, এখানে এখন রাত দুইটা। আমার বিছানায় শুয়ে আছে আমার স্ত্রী রোজ। যাকে নিয়েই আমার এত কষ্ট।আমার এত কিছু। আমি যখন কম্পিউটারের কিবোর্ড এ কাহিনীগুলো লিখছি তখন আমার ছেলে মেয়ে আর তোমাদের বৌমা অঘোরে ঘুমচ্ছে।তারা ঘুমাক তাদের না জানিয়েই আমি লেখে যেতে চাই আমার কাহিনীগুলো।

দেশে আসার দিনই আমি ওকে বলেছিলাম। চল আমাদের বাড়ী যাই। না, তার এক কথা প্রথমে ওদের বাড়ী যেতে হবে। কি আর করব। তার ভাইয়ের উত্তরার বাড়ীতেই আমাদের উঠতে হল। সেইদিন দুপুরেই আমরা চলে গেলাম আমার ছেলেমেয়ের নানা বাড়ী।অনেক দিন পর বাংলাদেশে আসার কারনে তুমি মনে করেছিলে আমি সবার আগে তোমার কাছেই যাব। কিন্তু আমি পারলাম না মা। শুধু ওদের মামার মোবাইল থেকে তোমার সাথে কথা হল। আমার কথাগুলো খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল। নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারছিলে আমার পাশে আমার প্রাণের প্রিয়তমা রয়েছে। হায়রে দুনিয়া! ছেলে তার মায়ের কাছ থেকে পৃথক হয় তাও আবার এই ভাবে। মা, তুমি অসুস্থ ছিলে এটা আমি জানতাম। আমি বুঝতে পারছিলাম তোমার সাথে এটাই আমার শেষ দেখা । তোমাকে সারাজীবন তো আর সময় দিতে পারিনি। শেষ সময়টুকু তোমার পাশে থাকব এটাই ছিল আমার সুপ্ত ইচ্ছা।

জান মা, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আমাদের এখানে মুসলিম কমিউনিটির বড় মসজিদটির উদ্বোধন হয়েছে। আমি বাংলাদেশে থাকার কারনে আমার অবর্তমানেই উদ্বোধন করতে হল।

আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম সেই প্রথম দিন থেকেই। দীর্ঘ চারদিন পর তোমার সাথে দেখা করার অনুমতি মিলল। একজন প্রবাসী হিসাবে আমি আমার পরিবার নিয়ে প্রাইভেট কার যোগে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমার প্রিয়তমা সেটা হতে দিল না। তার একটাই কথা, এত দুরের রাস্তা যেতে হবে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ। বাংলাদেশের নরমাল বাসে করেই আমি গেলাম আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে। আমাকে, আমার ছেলেমেয়ে কে দেখে তুমি যে কি পরিমান খুশি হয়েছিলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সময় তুমি ছিলে শয্যাশায়ী। সেই অবস্থায় তুমি আমাকে দোয়া করলে। তুমি এতই অসুস্থ ছিলে যে, আমাদের সাথে কথা বলতেও তোমার কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু গতবার তোমাকে যখন দেখেছি তখনও ছিলে কতটুকু স্বাভাবিক। তুমি হেসে হেসে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলে। কিন্তু আজ, তুমি পারলে না।

মা, তোমার মনে আছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থার কথা। সেই সময়গুলোতেও আমি সারাক্ষন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। খুব কমই বাড়ী আসতে পারতাম। যখনই বাড়ী আসতাম তখন তুমি তোমার সাধ্যমত আমার পছন্দের রান্নাগুলো করার চেষ্টা করতে। টিউশনি করেই আমাকে চলতে হত। পড়াশুনা আর টিউশনির ফাঁকে যখনই সময় পেতাম তখনই আমি তোমার কাছে ছুটে যেতাম। আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট এর পর আমি জানি মা তুমি অনেক অনেক খুশি হয়েছিলে। আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর টিচার হয়েছিলাম। মা, এই টিচার হওয়াই কি আমার জন্য কাল হল?

মা, তোমার কাছে দুই দিন থাকার পরই আমাদের ফিরতে হল উত্তরার সেই বাসাতে। আমি নিজ দেশেই পরবাসী হয়ে গেলাম। ওর এককথা তোমাকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে মেয়ের বিয়ের জন্য। মায়ের সেবা করার জন্য নয়। আমি আমার একমাত্র কন্যার বিয়ের জন্য আমার পরিচিতদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলাম। জান মা, আমি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে গেলাম। আমাকে ও এই অসুস্থতার মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় পাঠাত। আমার পুরানো বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে ইউনির কলিগদের কাছে গিয়ে একটা পাত্রের জন্য বলতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও থেকে সাড়া পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে তুমি বার বার আমাকে দেখা করতে বলছিলে ।আমি ওকে এটা বলতেই ওর কথা আগে মেয়ের বিয়ে তারপর অন্য কিছু। কি করব, কান্না ছাড়া অন্য কিছুই আমার করার ছিল না।

মা, তোমার মনে আছে যেইদিন আমি রোজ কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম? সেইদিন এটাকে তুমি ভাল চোখে নিতে পারোনি। আমি তোমাদের অগ্রাহ্য করেই বড়লোক হওয়ার আশায় বড় পরিবারে বিয়ে করলাম। আমার বড় হওয়ার আশা আজ আমাকেই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মা, আমি তো আমার জীবনের শেষ দিনগুলো বাংলাদেশের মাটিতে কাটাতে চেয়েছিলাম। রোজ এর কারনে আমি আজ কানাডার সিটিজেন । অনেক কিছুই আমি পেয়েছি। কিন্তু সবুজ মাঠ এর ধানের ক্ষেত আমি এখানে পাইনি । আমি সহজ সরল ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় এর পড়াশুনা আর অন্য কোন কিছুর দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় ছিল না আমার।

মা, অবশেষে আমরা আমার মেয়ের জামাই পেয়ে গেলাম। ঢাকার এক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ ওর সাথে আমাদের প্রথম দেখা হয়। মা, ছেলেটি ছিল আমার মত । একে বারেই সহজ সরল। টুকটাক কথা বলেই আমাদের ছেলেটিকে পছন্দ হল। এই ছেলে পেয়ে তো রোজ খুশিতে আদখান। আমার মেয়ের সাথে ছেলেটির কথা বলার ডেট ঠিক করলাম। এলিফ্যান্ট রোড এর একটি চাইনিজে ওরা বসল। কিন্তু না, ছেলে তো আমার মেয়ের সাথে কথা বলে বেকে বসল। যাও একটি ছেলে পেলাম সে আবার বেকে বসল। এই দিকে তোমার কাছে যাওয়ার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে গেলাম। এবার ছেলেটির সাথে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হল ওদের মামাকে। তিনি সেই পরিবারের সাথে কথা বললেন। হা, আমাদের তাড়াতাড়ি দেখে, বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখে তারা রাজি হলেন। যেদিন আমি, ওদের মামা এবং আমার ছেলে মিলে ওদের বাড়ী গেলাম সেদিন যাওয়ার সময় আমি দেখে গেলাম আমার মেয়ে কম্পিউটারে কি যেন লেখছে। আমি শুধু এই টুকুই বল্লাম, আমরা বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে ভালটাই নিয়ে যাব।

জান মা, আমার মেয়ের জন্য অনেক অনেক পাত্র খুজেছি। কানাডা, এমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন কোথাও আমরা ওর জোড়া মিলাতে পারিনি। এবার কার ছেলেটির সাথে আমি বেশি কথা না বল্লেও আমার ছেলে ও ছেলের মামা কথা বলেছে। তারা যেকোন মূল্যে এই রকম সহজ সরল ছেলেকে চায়। আমার মত করে যাতে তাকে ডমিস্টিক করে রাখতে পারে। মা, আমি মনে করেছিলাম, আমার মেয়ে অনতত আমার মত হবে। নিজেকে সৎ হিসাবে উপস্থাপন করবে । তার যে চাওয়া পাওয়াগুলো সব সে তার হবু বর এর কাছে বলবে। কিন্তু মেয়েটিও তা পারেনি। অনেক কথা কাটাকাটির পর আমরা আমার মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করলাম। তাও আবার এক সপ্তাহ পর। এর মধ্যে যা কিছু করার সবই করতে হবে। সব আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দেয়া। বিয়ের কেনাকাটা কত কি কাজ? তোমার সাথে দেখা করার ছুটি তো আমি পাচ্ছি না।

বিয়ের দিন । হা, আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলাম। আমার মত সহজ সরল একটা ছেলের সাথেই আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিলাম। রোজ এতে যে কি পরিমান খুশি হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিয়ের পরের দিনই আমার ছুটি । আমি ছুটি পেয়েও গেলাম। তোমার কাছে এসে দেখি তোমার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ হয়েছে। তুমি আগের মত একটু আধটু কথাও বলতে পারছিলে না। শুধু হাতে ইশারায় আমাকে কাছে টেনে নিয়ে চুমু খাচ্ছিলে। আমি তোমাকে ঢাকা নিয়ে আসব সেটা করারও সময় নাই। কিই বা করতে পারি আমি। আজ যদি রোজ এর মা অসুস্থ থাকতো তাহলে সে ঠিকই বড় কোন হসপিটালে তার মাকে ভর্তি করত। কিন্তু আমি তোমার পাশে বসে বসে গুলোকোজ এর পানি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছি না। মা, তুমি হাতের ইশারায় আমার মেয়েকে আর তার জামাইকে দেখতে চাইলে। পরদিন সকালে ওদেরকে আমি নিয়ে আসলাম আমার বাড়ীতে। তুমি আমার মেয়েকে দেখলে তার সাথে সাথে দেখলে আমার মেয়ের জামাইকে। তুমি তাকে জড়িয়ে ধরলে। ধরার পাশাপাশি তোমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল। তুমি বুঝতে পারছিলে তোমার মত আরেক মায়ের বুক খালি হচ্ছে। হায়রে দুনিয়া, এভাবেই কি দিনের পর দিন মায়ে রা তাদের সন্তানদের হারাবে!

তোমার অন্তীম সময়গুলোতে আমি তোমার কাছেই ছিলাম। কালেমা পড়ছিলাম আমি। তুমি শুধু চেয়েছিলাম। হয়ত আমার মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমার ছোট বেলার কথাগুলোই ভাবছিলে। মা, তুমি চলে গেলে আমাকে ছেড়ে। আমার আত্মার সম্পূর্ণ আবেগকে উজার করে আমি কেদে উঠলাম।মা, আমি তোমাকে ভাল কিছু দেখিয়ে বিদায় দিতে পারিনি। আমার মত অযোগ্য ছেলে যেন কোন মাই পেটে না ধরে। শুধু দুনিয়ার লোভে পড়ে কোন ছেলে যেন বিয়ে না করে।

মা, আজও আমি ঠিক হতে পারিনি। বাসায় বেশিক্ষন থাকতে পারি না। আমার মেয়ে তার স্বামীর জন্য ছল ছল করে চেয়ে থাকে । আমি তার চোখে তোমার কান্নাগুলো দেখতে পাই। আমি সেই মসজিদে বসে বসে তোমার জন্যই দোয়া করি। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা...


[এই গল্পটা একান্তই আমার কল্পনার। এর সাথে কারো জীবনের কোন অংশের মিল থাকতেও পারে। কেউ এতে দু:খ পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। ]

Thursday, January 29, 2009

কি আশ্চর্য!

ভাইয়া আমার ইউনি যেতে ভাল লাগে না। কেন? আমার বান্ধবীদের পছন্দ হয় না। কেন? তারা খুব স্বার্থবাদী । সারাক্ষণ পড়াশুনা আর পড়াশুনা। পড়াশুনার বাইরে যে একটা দুনিয়া আছে তারা বুঝতেই চায় না। তাতে তোমার কি? আমার বন্ধুরা আমার সাথে মিলে না। এসব কারণেই আমার বোন মাঝে মাঝে ইউনি যাওয়া মিস করে।

কিছু দিন আগে ওরা যাবে সার্ক ট্যুরে ।ভাইয়া আমাকে একটা স্পন্সর মেনেজ করে দাও না। আমি স্পন্সর পাব কোথায়? স্পন্সর না হলে তো যাওয়া যাবে না। তুমি তোমার বন্ধুদের বলে দেখ না, কি করা যায়? আমি আমার চেষ্টা করে গেলাম। কিন্তু স্পন্সর ম্যানেজ করতে পারলাম না। ওকে পাসপোর্ট করতে বল্লাম। কয়েকদিনের মধ্যে পাসপোর্ট হয়েও গেল। কিন্তু বিধিবাম, মোম্বাই এর বোমা হামলার কারণে ইন্ডিয়াতে ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া বন্ধ। দেশেই ট্যুর করতে হবে। কোন উপায় নাই। ডিপার্টমেন্ট থেকে ঠিক হল রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন যাবে । ওর একই কথা এই মেয়েগুলোর সাথে এক সপ্তাহ থাকতে হবে। আমি বল্লাম --মন চাইলে যাও। এ রকম সুযোগ আর পাবা না।

সে গেলও সেই ট্যুরে। ট্যুর থেকেই, সে কি গল্প। আমরা আজকে রাঙ্গামাটি যাচ্ছি। সারারাত জার্নি করেছি। খুব সু্ন্দর জায়গাটা। ভাইয়া জান, আমাদের এখানে লুডু ম্যাচ হচ্ছে। আমি এখনও টিকে আছি। ফাইনালে এক স্যারের সাথে খেলা হবে। সবাই বলছে খেলাতে হেরে যেতে ।তাহলে বিষয়টি নিয়ে আরও মজা করা যাবে। কিন্তু সে বোরহান স্যারকে হারিয়ে দিয়ে জিতে গেল। ভাইয়া জান, আমি লুডু খেলায় ফার্স্ট হয়েছি।পুরস্কার হিসাবে পেয়েছি একটি সুটকি মাছ আর লুডু খেলার ঘর। ভাইয়া, সুটকি মাছ তো আর এভাবে আনা যাবে না। তাই এটাকে কাটাকুটা করলাম। এটা করতে করতে আমার জান শেষ।

ওরা সুন্দর ভাবেই ফিরে আসল ঢাকাতে। এখন ওর ভিতরে একি পরিবর্তন! ওকে একবার হলে সিট মেনেজ করে দেয়ার পরও সেই উত্তরা থেকে সে নিয়মিত ক্লাস করে । আর ও কিনা কালকে আমাকে ফোন করে বলছে, আমি হলে থেকে গেলাম। ঝুমু আমাদের রান্না করে খাওয়াবে। কোন চিন্তা করতে আম্মা কে নিষেধ করে দিও।শুধু সেটাই নয়, ও ট্যুর এর পর এক দিনের জন্য ইউনি মিস দেয়নি । সবাই তো অবাক! এই মেয়ে এত নিয়মিত হল কিভাবে!!

Wednesday, January 21, 2009

হাজার মানুষের মাঝে তুমি আমার বন্ধু

ছেলেটির সাথে আমার পরিচয় বুয়েট কোচিং করার সময়। তখন কোচিং এর কোর্স শেষ দিকে । হাতে প্রিপারেশন এর সময় একদম কম। রেজাল্টও তত ভাল না। হাল্কা পাতলা ধরনের ছেলেটির প্রতি মায়াই হল। তার ডাকনাম টিপু। এরপর থেকে তার সাথে টুকটাক গল্প । কোথা থেকে পাশ করেছ? বাসা কোথায়? আব্বা কি করেন? দেশের বাড়ি এক জায়গায় আর ইন্টারের কলেজ করলে আরেক জায়গায়। আব্বুর বন্ধুর কলেজে পড়াশুনা করেছে। তার পরিবারের খোজখবর ইত্যাদি ইত্যাদি নিলাম। এক সময় কোচিং এর সময় শেষ হয়ে গেল। আর দেখা হয় না সেই বন্ধুটির সাথে।


দীর্ঘ আট বছর পর ইন্টারনেট এ চ্যাট করছি টিপুর সাথে । তার জিমেইল আইডির সাথে টিপু নামটি আছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। আপনি কোচিং করেছেন কোথায়? তারপর কলেজ । ওম্মা, সব দেখি মিলে যাচ্ছে একে একে। কি আশ্চর্য? আপনি তাহলে সেই টিপু । আপনারা ভাইবোন অনেক ছিলেন। ঠিক বলছি না? হা আপনি ঠিক বলেছেন!!

তারপর ব্যক্তিগত আলাপচারিতা। কোথায় থাকেন? কি করেন? ভাইবোনদের অবস্থা কি? ভালই আছে আমার বন্ধু টিপু।

দীর্ঘ আট বছর পর খুজে পাওয়া বন্ধু টিপুকে পেয়ে আমি আসলেই খুশি।